December 23, 2025, 5:38 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, টানা দুই দিন সূর্যের দেখা নেই ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি কমের মধ্যেও রপ্তানি ও রাজস্ব বৃদ্ধি লাখো মানুষের শ্রদ্ধায় শেষ বিদায়/ চিরনিদ্রায় শহীদ ওসমান হাদি কুষ্টিয়া নির্বাচন অফিসে অগ্নিকাণ্ড, তদন্তে প্রশাসন শোকবার্তায় জামায়াত /আওয়ামী লীগের প্রতিবিপ্লবের অপচেষ্টা রুখে দেওয়ার কারিগর ছিলেন হাদি’ মব সন্ত্রাসে জাতি বিভক্ত, দায় সরকারের: মির্জা ফখরুল সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে সতর্ক থাকার আহ্বান সরকারের জুলাই–অক্টোবরে বাণিজ্য ঘাটতি ৭.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে অন-ডিউটি চিকিৎসকের মোবাইল গেম খেলা/ দুদকের অভিযানে মিলল সত্যতা, আরও অভিযোগ আজ মহান বিজয় দিবস/বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সংগ্রাম ও বিজয়ের গৌরবগাথা

কুষ্টিয়া বালি মহলের পোস্টমর্টেম/ ২শ’ কোটি টাকার ভাগ কাদের পেটে ?

দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদন/
আদালতে মামলা; তাই বালিমহল ইজারা দেয়া নিষেধ কুষ্টিয়া জেলার ২১টি বালিমহল। কিন্তু বালি উত্তোলন থেমে নেই। প্রতিদিন অন্তত: ৫ লক্ষ ঘনফিট মোটা বালি উত্তোলিত হচ্ছে। যার আনুমানিক মূল্য নূন্যতম (প্রতি ঘনফুট ৩০-৪০টাকা হিসেবে) দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। এভাবেই চলছে প্রায় ১০ বছর। সাধারণ হিসেবে এই বালি খাত থেকে গত দশ বছরে লুট হয়েছে প্রায় ২শ কোটি টাকা। এই টাকা কাদের পকেটে গেছে ? এ প্রশ্ন এখন আর জোড়ালো নয়। কারন মানুষও প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের অবহেলা, ব্যর্থতা অথবা যোগসাজসে সৃষ্ট এই আইনগত জটিলতা বিদ্যমান থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রাজস্ব হারানোর তথ্যটি জেলার রাজস্ব বিভাগের।
মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া বালিঘাটের ব্যবসায়ী ওহিদুল কবিরাজ বলেন, পশ্চিম বাহিরচর ও রানাখড়িয়া-তালবাড়িয়া বালি ঘাটে পদ্মা নদী থেকে প্রতিদিন নির্মাণ কাজের সর্বোচ্চ মান সম্মত প্রায় ৫লক্ষ ঘনফুট বালি উত্তোলন ও সরবরাহ হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পরিশ্চমাঞ্চলের ২০ জেলায় যার আর্থিক মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। ভেড়ামারা বারোমাইল বালি ঘাটের ব্যবসায়ী মাহবুল হক বলছেন, ঘাট মালিকদের মাধ্যমে আদায়কৃত সরকারী টোল দিয়েই ব্যবসা করি। আদায়কৃত এই টাকা আদৌ সরকারের ঘরে যাচ্ছে কিনা সেটা বলতে পারব না। ভলগেট নৌকা মালিক সাহাবুল ইসলামের অভিযোগ, সরকারী ভাবে বালিমহাল ইজারা কার্যক্রম বন্ধ থাকর সুযোগ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে জোর পূর্বক প্রতিদিন কেবলমাত্র বাহিরচর বারোমাইল ও ঘোড়ামারা তালবাড়িয়া বালিঘাটের অন্তত: ৫শ নৌকা থেকে গড়ে ৫০লক্ষ টাকা বিনা রশিদে চাঁদা আদায় করছেন ঘাট মালিকারা। এতে চরম নিষ্পেষনের শিকার হচ্ছি আমরা।
এসব বিষয়ে মুখ খোলা যাবে না। ডিসি অফিস, ইউএনও অফিস ও পুলিশ সবাই জানে এখানে কি হচ্ছে। প্রশাসন পদক্ষেপ নিয়ে বৈধভাবে ইজারা দিলে সরকারী রাজস্ব পেতো, আবার রেট বেধে দিলে আমরাও নির্ধারিত টোল দিয়ে ব্যবসা করতে পারতাম।ঘোড়ামারা-তালবাড়িয়া-রানাখড়িয়া বালিঘাট মালিক ইউপি চেয়ারম্যান হান্নান মন্ডল প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন থেকে ৪ কোটি টাকা দিয়ে আমি যুগিয়া-তালবাড়িয়া ধুলটমহল ইজারা নিয়ে বালিমহালের টোল আদায় করছি। এসময় ধুলট মহলের ইজারাদার বালিমহালের টোল নিচ্ছেন কিভাবে? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের মুখে তিনি অসংলগ্ন কথা বলেন এবং বক্তব্যের স্বপক্ষে প্রাসঙ্গিক বিধি সম্মত প্রমান দিতে ব্যর্থ হন।
তবে প্রশাসনের সাথে যোগসাজসের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। বি আই ডবিøউ টি এ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ইজারাদার দাবিকারী ভেড়ামারা পশ্চিম বাহিরচর ও বারোমাইল বালিঘাটের টোল আদায়কারী মেসার্স বেøজ ইন ট্রেড এর স্বত্ত¡াধিকার আতিকুজ্জামান বিটু বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নৌ-যান চলাচলের টোল আদায়কারী হিসেবে সরকারী রাজস্ব ভ্যাট ট্যাক্স দিয়েই বাহিমহলের টোল তুলছি। আইনগত জটিলতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা টাকা পয়সা সব দেয়ার পরও নৌ-মন্ত্রনালয় দাবি করে এটা তাদের আবার ভুমি মন্ত্রনালয় দাবি করে এটা তাদের। এখানে আমরা নিরুপায় হয়ে হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দিলাম। বালিমহালের ইজারা বন্ধ থাকলেও সেখান থেকে টোল তুলছেন এমন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে যা কিছু হচ্ছে তার সবই সবাইকে ম্যানেজ করেই হচ্ছে এবং সংগৃহীত টাকার ভাগ জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে দেন বলে দাবি করেন তিনি।
জেলার ২১টি বালিমহালকে মামলা জটিলতায় আটকে রেখে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির কারিগর আনোয়ারুল হক মাসুমের লেটার হেড প্যাডে ব্যবহৃত ঠিকানার সরেজমিন কোন অস্তিত্ব কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় নেই বলে নিশ্চিত করেন ৬নং পৌর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বদরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই নাম ঠিকানা ভুয়া এবং অস্তিত্বহীন। কুষ্টিয়া সরকারী কৌশুলী(জিপি) এ্যাড. এএসএম আকতারুজ্জামান মাসুম জানান, দীর্ঘ ১০বছর ধরে ঠিকানা অস্তিত্বহীন মামলাবাজ আনোয়ারুল হক মাসুম রীট পিটিশন করে বালিমহালের ইজারা কার্যক্রম বন্ধ রেখে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার কোটি টাকা সেই সাথে অদ্যবধি হিসেব মতে অন্তত: সরকারের ২শ কোটি টাকার রাজস্ব গায়েব করে দিয়েছেন।
কুষ্টিয়া জেলা সনাক কুষ্টিয়ার সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম টুকু অভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানান, সরকারের সাথে ঠিকানা অস্তিত্বহীন মামলাবাজ দীর্ঘ ১০বছর ধরে ২শ কোটি টাকা রাজস্ব কুক্ষিগত করল অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কিভাবে এটা মেনে নিচ্ছেন তা কোন ভাবেই বোধগম্য নয়। এতে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে যে, সৃষ্ট এই আইনী জটিলতা জিইয়ে রাখার সাথে প্রশাসনেরর কারো কারো যোগসাজস থাকতে পারে; অন্যথায় এটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এবিষয়ে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) ওবাইদুর রহমান এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জেলার ২১টি বালিমহালে আইনগত জটিলতা বিদ্যমান থাকায় দীর্ঘ ১০ বছরে দেড় থেকে ২শ কোটি টাকা সরকারী রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। ভুমি মন্ত্রনালয় থেকে ইতোমধ্যে বিজ্ঞ আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়েছে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে এই মামলা জটিলতা নিরসনের জন্য। উচ্চ আদালত থেকে আইনী লড়াই করে যখনই কোন বালিমহাল ভ্যাকেট করা হয় তখনই আবার নতুন ভাবে রীট পিটিশন করে একটি মহল দিনের পর দিন এই জটিলতা সৃষ্টি করে চলেছেন।
বিভিণœ মহল থেকে অভিযোগ আসছে যে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক যোগসাজশ এর পেছনে অন্যতম। জেলার একাধিক রাজনৈতিক নেতা জানান এটা অন্যায়। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেই কেন তার তোন জবাব তাদের কাছে নেই। প্রশাসনের অনেকের সাথে কথা বললে তারা জানা সাবজুডিস বিষয় কোন মন্তব্য নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Comments are closed.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net